সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ ধরে ১১তম গ্রেড দেওয়া, শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি এবং ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন-এই তিন দফা দাবিতে সারা দেশের ন্যায় কটিয়াদী উপজেলায় ১২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি এবং শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন করে তাদের আন্দোলন চালিয়ে গেছেন।
শিক্ষকরা পরীক্ষা বন্ধ রেখে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করায় কটিয়াদীতে সচেতন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অফিস কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
কটিয়াদীতে শিক্ষকদের এসব আন্দোলনে সহকারী শিক্ষকদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন প্রধান শিক্ষকের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে কটিয়াদী ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিতর্কিত এই সহকারী শিক্ষকের সম্পৃক্ততা ছিল দৃশ্যমান।
গতকাল শিক্ষকদের আন্দোলনে উদ্ধৃত করার অভিযোগে ওই সহকারী শিক্ষককে কটিয়াদী থেকে নেত্রকোনা বদলি করা হয়েছে। তার বদলির খবরে কটিয়াদীর সহকারী শিক্ষক মহলে স্বস্তি ও আনন্দের সঞ্চার সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়াও সাম্প্রতিক দৈনিক গণকন্ঠ পত্রিকার কটিয়াদী উপজেলা প্রতিনিধি হামিদ হাসানকে সংবাদ সংগ্রহের সময় বাঁধা করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। সাংবাদিকদের সাথে তার এই উদ্ধত্বপূর্ণ আচরণে সাংবাদিক মহলে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে ।
জানা যায়, ২০২২ সালে কটিয়াদী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সেক্রেটারি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই নিয়াজ মোহাম্মদ সমিতির কার্যক্রম এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। অভিযোগ রয়েছে—তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার, সহকারী শিক্ষকদের জিম্মি করে রাখা, সমিতির অফিসকক্ষ দীর্ঘদিন তালাবদ্ধ করে রাখা এবং সমিতির কার্যক্রম অচল করে রেখেছিলেন। প্রতিষ্ঠানের নিয়মবহির্ভূত বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও স্কুলে পাঠদানের ক্ষেত্রে অমনোযোগী শিক্ষক হিসেবে তিনি বেশ পরিচিতি লাভ করেছেন। রাতদিন ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাকে প্রাইভেট-কোচিং নিয়ে ব্যস্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
তার এসব অনিয়মের কারণে শিক্ষক সমিতির সদস্যরা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট একাধিকবার অভিযোগ দাখিল করলেও কার্যকর কোনো সমাধান মিলেনি। তার বিরুদ্ধে পূর্বে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সমিতির অন্যান্য সদস্যরা জানান, নিয়াজ মোহাম্মদ ফ্যাসিবাদের ধাঁচের কিছু শিক্ষকের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছিলেন, যা সমিতির স্বাভাবিক কার্যক্রমকে আরও ব্যাহত করে। তার দাপটের কারণে অনেক সদস্য নীরব থাকতে বাধ্য হন।
এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি নিয়াজ মোহাম্মদের বদলির আদেশ জারি হলে শিক্ষক সমাজে স্বস্তির বাতাস বইতে শুরু করে। দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা সমিতির কার্যক্রম আবারও প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছে বলে জানান সদস্যরা।
সারাদেশে সহকারী শিক্ষক নেতৃবৃন্দের মধ্যে ৪২ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও, কটিয়াদী উপজেলার সহকারী শিক্ষক নেতা নিয়াজ মোহাম্মদই একমাত্র ব্যক্তি যাকে বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে। তাকে কটিয়াদী ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বদলি করে নেত্রকোনা জেলা সদরের আজাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে।
সহকারী শিক্ষকরা আশা ব্যক্ত করে বলেন —এই বদলির মাধ্যমে সমিতির স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও নিয়মিত কার্যক্রম আরও জোরদার হবে।
এ. এস. এম হামিদ হাসান